[শৈশবকালীন সংক্রমণ ও রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে শিশু সুরক্ষা এবং প্রসব পরবর্তী মৃত্যুহার হ্রাসে আশুলিয়া মহিলা ও শিশু হাসপাতাল।]
ডিসেম্বর ২০২২
আশুলিয়া মহিলা ও শিশু হাসপাতাল থেকে প্রণীত
শিশুর বৃদ্ধি, বিকাশ এবং দীর্ঘস্থায়ী অবক্ষয়জনিত রোগের প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য নবজাতক শিশু এবং অল্পবয়সী বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানো (ইনফ্যান্ট অ্যান্ড ইয়াং চাইল্ড ফিডিং বা আইওয়াইসিএফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই বছরের কম বয়সী শিশুরা পর্যাপ্ত বুকের দুধ না পেলে এবং অন্যান্য পরিপূরক খাবারে অভ্যস্ত হলে, তাদের অপুষ্টিজনিত রোগ এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং (ইবিএফ) মানে হচ্ছে, নবজাতক শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াতে হবে এবং ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট দ্রবণ, ভিটামিন, খনিজ সম্পূরক বা ওষুধ ব্যতীত অন্য কোন তরল (এমনকি পানিও নয়) বা কঠিন খাবার দেওয়া যাবে না। স্তন্যপান করানো মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্যই অত্যন্ত উপকারী। এবং এক্ষেত্রে একটি কার্যকর ইবিএফ কভারেজ থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে, এর মাধ্যমে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ১৩% থেকে ১৫% পর্যন্ত পর্যন্ত মৃত্যু এড়ানো সম্ভব, বিশেষত মধ্যম এবং নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে। বুকের দুধ খাওয়ালে শিশুরা এলার্জি , অসুস্থতা এবং স্থূলতা থেকে রক্ষা পায়; একই সাথে এটি শৈশবকালীন সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করে। যেমন কানের সংক্রমণ এবং ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সার এর মতো রোগ। এটি প্রসব পরবর্তী মৃত্যুর হার হ্রাস করে। এটি শিশুর মানসিক ও শারিরীক বিকাশে সহায়তা করে এবং আকস্মিক শিশু মৃত্যুর সিন্ড্রোমের হার হ্রাস করে। এছাড়াও, দেখা গেছে যেসব শিশু মাতৃদুগ্ধ পান করে তারা উচ্চতর বুদ্ধিমত্তার (IQ) অধিকারী হয়।
বাংলাদেশে, স্তন্যদানকারী মায়েদের মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো বা ইবিএফ অনুশীলনের প্রবণতা দীর্ঘ সময় ধরে অপরিবর্তিত ছিল। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) এর রিপোর্ট অনুসারে, ১৯৯৩-৯৪ এবং ১৯৯৯-২০০০ সালে ইবিএফ এর প্রসারতা ছিল প্রায় ৪৫%, ২০০৪ সালে ছিল ৪২% এবং ২০০৭ সালে ছিল ৪৩%। বিডিএইচএসে এর ২০১১ সালের রিপোর্টে ইবিএফ এর ব্যাপকতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ৬৪% হয়, যা ২০১৪ সালের বিডিএইচএস এর রিপোর্টে কমে ৫৫% এ নেমে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে ইবিএফের এই প্রসার ও পতনের কারণগুলো এখনো অনুমান নির্ভর। বিডিএইচএস ইবিএফ বা শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর জাতীয় প্রসারের উপর তথ্য সংগ্রহ করে, যদিও এটি থেকে ইবিএফ-কে প্রভাবিত করার কারণসমূহের উপর বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় নি, বা ইবিএফ-এর আঞ্চলিক হার এবং অঞ্চলগুলোতে ইবিএফ এর ক্রমাগত পরিবর্তনের কারণগুলোও চিহ্নিত করা যায় নি।
সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র মাতৃদুগ্ধ পান করা শিশুর অনুপাত ২-৩ মাস পর্যন্ত ৫২% হলেও, তা ৪-৫ মাসে এসে ২৩% এ দ্রুত নেমে আসে। এ ধরনের নমুনা পরিচালিত হওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা এবং প্রতিবন্ধকতা গুলো বোঝা, শিশুর ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যাভাসের বিপরীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রথম পদক্ষেপ। বাংলাদেশের প্রায় সব শিশুই জীবনের প্রথম বছরে কিছুটা হলেও মায়ের বুকের দুধ পান করে, এবং সৌভাগ্যবশত, ২ বছরের বয়স পর্যন্ত শিশুকে স্তন্যপান করানো একটি সাধারণ বিষয়, যার ধারাবাহিকতায় ২ বছর বয়সী ৯১% শিশু স্তন্যপান করে থাকে। কিন্তু, তারপরও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে অপুষ্টির হার সবচেয়ে বেশি যেখানে ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় অর্ধেক শিশু কম ওজনের বা খর্বাকার হয়ে থাকে।
বুকের দুধ খাওয়ানোর ইতিবাচক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, সন্তোষজনকভাবে বুকের দুধ খাওয়ানোর বর্তমান হার বিশ্বজুড়ে কম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে, ইবিএফ অনুশীলনের হার শ্রীলঙ্কায় সর্বোচ্চ (৭৫.৮৪%) এবং পাকিস্তানে (৩৭.৭%) সর্বনিম্ন। রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৯০ এর দশকের চেয়ে ২৮% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বাংলাদেশে বর্তমান ইবিএফ অনুশীলনের প্রবণতা প্রতি বছরই ওঠানামা করছে, ২০০৪ সালে ৪২%, ২০০৭ সালে ৪৩%, ২০১১ সালে শিশুকে কোলস্ট্রাম খাওয়ানো হয়, যা ২০১৪ সালে ৫১% এ উন্নীত হয়।
১৯৮৯ সাল থেকে, হাসপাতাল ও মিডিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ) প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার অধীনে বুকের দুধ খাওয়ানো কার্যক্রমকে সমর্থন দিয়ে আসছে। ১৯৯৩ সাল থেকে সরকার এবং বিবিএফ মায়ের দুধের বিকল্প বাজারজাতকরণের জাতীয় কোডের সমন্বয়, ১৯৯১ সাল থেকে শিশু-বান্ধব হাসপাতাল প্রবর্তন, ২০০১ সাল থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি আইন এবং ৬ মাসের (১৮০ দিন) অন্য ইবিএফ-এর সর্বোত্তম মেয়াদের নীতিতে অবদান রেখে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় (এমওএইচএফডব্লিউ) নবজাতক শিশু এবং অল্পবয়সী বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানো (ইনফ্যান্ট অ্যান্ড ইয়াং চাইল্ড ফিডিং বা আইওয়াইসিএফ) কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়েছেে এবং ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন (আইটিএইচএল) এর নেতৃত্বে বেসরকারী সংস্থা-এনজিওগুলোর সহযোগিতায় আইওয়াইসিএফ কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়ন করছে।
শিশুস্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর অনুশীলনগুলো প্রতিরোধ করতে হলে, বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো কী, সেটি বোঝা জরুরি। উচ্চ আয়ের পরিবারগুলোতে, শিশুর ফর্মুলা খাবারের বিপণন এবং মাতৃত্বকালীন ছুটির নীতিগুলো এক প্রকারের প্রতিবন্ধকতা, যা “বাজারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি” বোঝার গুরুত্ব তুলে ধরে। বাজারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বোঝার জন্য বাজারের সাথে সম্পৃক্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী বা পরিচালনাকারীদের আচরণের তদন্ত এবং বিশ্লেষণ প্রয়োজন। স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোতে, জানার জন্য পর্যাপ্ত অ্যাক্সেস না থাকা, স্বাস্থ্য সুবিধার বাইরে ডেলিভারি এবং মানসিকভাবে অপ্রস্তুত হওয়াকে বুকের দুধ খাওয়ানোর বাঁধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে, বুকের দুধ খাওয়ানো উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবাংন সত্ত্বেও স্তন্যপান করানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে নিম্নলিখিত কারণগুলো শিশুর জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্যভাবে ভূমিকা রেখেছেঃ জেলা হাসপাতালে জন্মদানকারী মায়েরা, ডেলিভারি রুমে তাদের দৃশ্যমান গোপনীয়তা বজায় রাখতে পারে, নবজাতক স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাঁদে এবং নবজাতক ত্বককে মায়ের ত্বকের সংস্পর্শে রাখা হয়।
বিদ্যমান বিস্তৃত সমীক্ষাটি থেকে জানা যায় যে, বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা গুলোকে তিনটি আন্তঃসম্পর্কিত ডোমেইনে চিহ্নিত করা যায়ঃ ব্যক্তি স্তর, সামাজিক স্তর এবং পদ্ধতিগত স্তর।
ব্যক্তি স্তরের বাঁধাসমূহঃ ব্যক্তি স্তরের বাধাগুলো সরাসরি শিশু, মা, বাবা, দাদী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পর্কিত। উদাহরণস্বরূপঃ
স্তন্যপান করানো সম্পর্কে ভুল ধারণাঃ নবজাতক শিশুদের কোলস্ট্রাম খাওয়ানোর বিষয়ে অনেক মা এবং দাদীর মাঝে। অনেক মা বিশ্বাস করতেন যে, যেহেতু এটি বেশ ঘন, নবজাতক এটি হজম করতে পারবে না এবং এটি খাওয়ালে নবজাতকের পাতলা পায়খানা হতে পারে। ফলে এসব মায়েরা তাদের নবজাতক শিশুদের মধু বা চিনি মিশ্রিত পানি দিতেন। মায়েদের এসব ভুল ধারণা শিশুদের শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বাঁধা হিসেবে কাজ করে।
পরিবারের সদস্য এবং মায়েদের মধ্যে জ্ঞান এবং দক্ষতার অভাবঃ অনেক মা জানিয়েছেন যে তারা কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কারদের (সিএইচডব্লিউএস) বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ অনুসরণ করেননি কারণ তারা তাদের উপর পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের দেয়া নির্দেশনা মতো, ৬ মাসের কম বয়সী শিশুকে ফর্মুলা দুধ বা সুজি খাওয়ানোর চাপ ছিল। যারা বয়ঃসন্ধিকালে মা হয়েছেন তারা বেশিরভাগ সময়েই সঠিক স্তন্যপান করানোর কৌশল সম্পর্কে অবগত থাকেন না, যার ফলে তাদের শিশুদের অপর্যাপ্ত স্তন্যপান করানো হয়। বিশেষত, যেসব নারীরা স্বামীর সাথে শহুরে বস্তিতে একক পরিবার হিসেবে বসবাস করেন, সেইসব মায়েদের ক্ষেত্রে এটি ঘটে থাকে।
সামাজিক স্তরের বাঁধাসমূহঃবাংলাদেশের রক্ষণশীল সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি, ধ্যান-ধারণা এবং সংকোচবোধ মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপঃ
মায়েরা একজন আদর্শ গৃহিণী হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ঘরের কাজগুলো সময়মতো সম্পন্ন করলে, তবেই তিসি পরিবারের সদস্যেদের কাছে প্রশংসিত হন। পরিবারের সদস্যদের এ ধরনের প্রত্যাশাগুলোই, শিশুদের পর্যাপ্ত বুকের দুধ খাওয়ানোর পরিবর্তে গৃহস্থালির কাজে বেশি সময় অতিবাহিত করতে মায়েদের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
বাচ্চাদের ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোকে সমাজে বাবা মায়ের আর্থিক স্বচ্ছলতার মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মাঝে মাঝে মায়ের দুধ খাওয়ানোর ধারাবাহিকতা মায়ের তার সন্তানটি ছেলে নাকি তার উপর নির্ধারিত হয়। মায়েরা তাদের অল্পবয়সী ছেলে শিশুকে (১৫-২৪ মাস) বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে অস্বস্তি বোধ করেন।
ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবও বুকের দুধ খাওয়ানোর অভ্যাসকে প্রভাবিত করে থাকে। কিছু মুসলিম মায়েরা মনে করেন যে, তাদের ছেলে সন্তানকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে গেলে তাদের জন্য পাপ হবে।
পদ্ধতিগত-স্তরের বাঁধাসমূহঃবিভিন্ন পারিপার্শ্বিক বৈশিষ্ট্য যেমন, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য সেবা (প্রাপ্য রিসোর্স সমূহ এবং সুযোগ-সুবিধার মান এবং যত্ন প্রদান সহ), কাজের পরিবেশ এবং পাবলিক পলিসি ইত্যাদি পদ্ধতিগত স্তরের বাঁধা সমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত যা বুকের দুধ খাওয়ানোর অনুশীলনকে প্রভাবিত করে থাকে।
বুকের দুধ খাওয়ানোর উপর সিজারিয়ান ডেলিভারির বিরূপ প্রভাবঃ গবেষণায় দেখা গেছে, যে মায়েরা সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে জন্মদান করেছেন তারা অপর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ উৎপাদন হচ্ছে বলে দাবি করছেন এবং প্রসবের সাথে সাখে শিশুকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রসবপূর্ব পরিচর্যার সময় (এএনসি), এই মায়েদের নিরাপদ প্রসবের জন্য এবং স্বাভাবিক ভ্যাজাইনাল প্রসবের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একজন চিকিৎসক দ্বারা একটি প্রাইভেট হাসপাতালে বা একটি ক্লিনিকে সিজারিয়ান সেকশন করতে উৎসাহিত করা হয়।
বুকের দুধের বিকল্প প্রচারণায় আকর্ষণীয় মিডিয়া বিজ্ঞাপনঃ গবেষণায় দেখা গেছে যে, অনেক সময় মায়েরা টেলিভিশনে আকর্ষণীয় মিডিয়া বিজ্ঞাপন দেখে ফর্মুলা দুধ বেছে নিতে আগ্রহী হন। এ ধরনের বিজ্ঞাপন গুলোতে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর উপকারিতা ব্যাখ্যা করা হয় এবং একটি সুস্থ শিশু এবং একজন স্মার্ট মায়ের ছবি প্রদর্শিত হয়।
ফর্মুলা দুধ দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় অনেক মায়েরা জানিয়েছেন যে, তারা চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক ও ফার্মেসির দোকানদারের কাছে গেলে তারা তাদের স্বেচ্ছায় ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে পরামর্শ দিয়েছেন যে কারণে তারা তাদের শিশুদের ফর্মুলা দুধ খাওয়াচ্ছেন।
মায়েদের কর্ম-পরিবেশে অপর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাঃ শহুরে এলাকায়, কর্মজীবী মায়েরা তাদের সন্তানদের ছয় মাস বয়স হওয়ার আগেই কর্মক্ষেত্রে (বিশেষ করে পোশাক কারখানায়) যোগদান করতে বাধ্য হন, যদিও ইবিএফ নিশ্চিত করার জন্য কর্মক্ষেত্রে ডে-কেয়ার সেন্টারের অভাব রয়েছে। ঢাকা শহরের পোশাক কারখানায় কাজ করা বিপুল সংখ্যক নারী তাদের গ্রামের বাড়িতে তাদের দাদা-দাদী বা নানা-নানীর তত্ত্বাবধানে রাখে। এই কৌশলটি কর্মজীবী মায়েদের সন্তানদের যত্নের কোনো ঝামেলা ছাড়াই, বেশি কাজ করে, অধিক উপার্জন করার সুবিধা দেয়।
এছাড়াও অনেক সময় অনেক মায়েরা মনে করেন যে, তাদের শিশুদের সঞ্চয় করে রাখা বুকের দুধ খাওয়ানো একটি অস্বাভাবিক অভ্যাস, যা সময়সাপেক্ষ, কষ্টকর এবং সেবাদানকারীদের জন্যও ঝামেলা। যার ফলে, মায়ের পরিবর্তে নিয়োজিত সেবাকারীরা শিশুদের ফর্মুলা দুধ বা সুজি খাওয়ান এবং মায়েরা কাজের জন্য বাইরে গেলে প্রায়ই তারা নিম্নমানের জাঙ্ক ফুড সরবরাহ করেন।
(জানুয়ারি-অক্টোবর), ২০২২ এর সময়কাল থেকে আশুলিয়া মহিলা ও শিশু হাসপাতালে মোট ২২১৪ জন রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করেছে।
তাদের প্রসব পরবর্তী বিভাগটি ২ ভাগে বিভক্ত- ইনডোর এবং আউটডোর। ইনডোর এবং আউটডোর বিভাগের অধীনে তাদের ৪টি মানদন্ড রয়েছেঃ
এছাড়াও, এএনসি কাউন্সেলিং এর মোট সংখ্যা ৩১৫ টি। চিকিৎসা গ্রহণ করা শিশুদের মধ্যে ১০৩৬ জন ছেলে শিশু এবং ৮৬৬ জন মেয়ে শিশু।
যেহেতু, মায়ের সাথে সম্পর্কিত তথ্যগুলি পর্যবেক্ষণ করা জরুরি, তাই বয়স ভিত্তিক গ্রুপ এবং কতজন মা রোগী, প্রতিটি গ্রুপে পড়েছে তা নিম্নে দেওয়া হলোঃ
এখানে পাই চার্ট অনুসারে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সর্বাধিক সংখ্যক মায়েরা (২১-২৫ বছর) বয়সভিত্তিক গ্রুপের মধ্যে পড়ে যা ৩৫%। এর পরে (১৫-২০) এবয় (২৬-৩০) বয়স ভিত্তিক গ্রুপের প্রত্যেকটিতে রয়েছে ২৬% মায়েরা। (৩১-৩৫) এর মধ্যে রয়েছেন ১০% মা। সবশেষে, সবশেষে, সর্বনিম্ন হার রয়েছে ২% এবং ১% যা যথাক্রমে (৩৬-৪০) এবং ৪০ এর বেশি এই দুটি বয়সভিত্তিক গ্রুপের মধ্যে পড়েছে।
হাসপাতালটি মায়েদের কাছ থেকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছে। অভিযোগগুলো পর্যবেক্ষণ করার সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেখেছে যে, সবগুলো অভিযোগ প্রাসঙ্গিক নয়। নীচে মায়েদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অভিযোগগুলোর ফলাফল দেওয়া হলোঃ
বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মায়েরা অসুবিধার সম্মুখীন হয় এবং এর পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। আশুলিয়া মহিলা ও শিশু হাসপাতালে আসা মায়েদের কাছ থেকে এই ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে যার মোট সংখ্যা ছিল২২১৪। তবে এর মধ্যে মাত্র ৬২৫ টি সঠিক এবং ১৫৮৮ টি ভুল।
সঠিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, বেশিরভাগ মায়েদের স্তনবৃন্ত ছোট হওয়ার কারণে বুকের দুধ খাওয়াতে সমস্যা হয় এবং সংখ্যাটি ১২৭, যা সবথেকে বেশি। প্রসবের কারণে (৫৮) জন্মদানের পর মায়ের স্তন শরীরের ভিতরে ঘটে যাওয়া সমস্ত পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না। যার ফলে, ইনভার্টেড স্তনবৃন্ত (৪৪), চ্যাপ্টা স্তনবৃন্ত (৪২), এবং কালচে স্তনবৃন্ত (২৯) এর মতো সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও কিছু মায়েদের ক্ষেত্রে অন্যান্য কারণ যেমন - ম্যাস্টােইটিস, স্তন ফোড়া বা নালী ব্লকের কারণে, এমনকি তাদের দত্তক নেয়া সন্তানদের কারণেও বুকের দুধ খাওয়ানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
একটি কর্তব্যনিষ্ঠ হাসপাতাল হিসেবে আশুলিয়া মহিলা ও শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ তাদের রোগীদের আরও দক্ষতার সাথে সহায়তার জন্য কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। হাসপাতালটি মোট ২২১৪ জন রোগীকে কাউন্সেলিং করেছে। এক্ষেত্রে অবস্থান এবং সংযুক্তির সংখ্যা মোট ২২১৪ টি। মানসম্মত চিকিৎসার জন্য তারা ওকেতানি স্তন ম্যাসেজ এর সাথে মায়েদের পরিচিত করেছে যা মূলত স্তন্যদানের সমস্যার যেমন পর্যাপ্ত বুকের দুধ উৎপাদন না হওয়া অথবা স্তন্যপ্রদাহ উপশমের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়াও হাসপাতালটি মোট ২০৬ টি নম্বর ট্র্যাকশন পরিচালনা করছে।
সমস্ত প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে, বুকের দুধ খাওয়ানোর বাধাগুলো সমাধান করতে এবং শুধুমাত্র স্তন্যপানে মায়েদেরকে উৎসাহিত করতে আশুলিয়া মহিলা ও শিশু হাসপাতাল বাস্তবায়নের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
১. তথ্য হাব উন্নয়ন